নিজের শৈশব-কৈশোরকে ফিরিয়ে আনতে পারেন কে?কবি। কবি ছাড়া আর কেউ নন। ‘কবি’ এখানে বলা হচ্ছে বৃহত্তর অর্থে। তিনি একজন গদ্যশিল্পীও হতে পারেন। হতে পারেন চিত্রশিল্পী বা ভাস্কর। স্থপতি অথবা সাংগীতিক। তিনি যে-ই হোন, তাঁর অন্তর্গত কবিই আবার ফিরিয়ে আনে বাল্যকাল। শুধু সত্তর দশকেরই নয়আমাদের সময়েরই একজন প্রধান কবি আবিদ আজাদ যেন একটি জাদু-প্রদীপ জ্বেলে ফিরিয়ে এনেছেন তাঁর বাল্য-কৈশোরের স্বপ্নবিদ্ধ জগৎ : ফুল আর বন্ধু-বান্ধব, বাপ-মা-ভাই-বোন আর পতঙ্গ, পিঁপড়ে আর লেখক হওয়ার স্বপ্ন, প্রেস আর পল্লীকবি জসীমউদ্দীন, যুবতীর গোপনাঙ্গ আর ধানীজমি : এক মফস্বল-শহরের চিরকালীন রঙিন অপরিবর্তিত জগৎ, এক ‘অসম্ভবের সোনাদানা’। ছোটো থেকে বড়ো হয়ে ওঠার ইতিবৃত্ত শুধু বাংলা ভাষায় নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন সাহিত্যেই রচিত হয়েছেÑকখনো স্মৃতিকথার আদলে, কখনো উপন্যাসের ছাঁচে। আসলে তো শৈশব-কৈশোর এমন-এক অমোঘ বিষয়, যা আমাদের মধ্যে মৃত্যুকাল অবধি প্রোথিত থাকে। হারানো সেই জগৎকে স্মৃতি থেকে খুঁড়ে পুনর্র্নিমাণ করেছেন ফের আবিদ আজাদ। গদ্য লেখেন তিনি কবিতার ভাষায়-শব্দে-বাক্যে প্রাণসঞ্চারক যে আশ্চর্য ভাষায় ছবির পর ছবি তৈরি করলেন, তা আমাদের প্রত্যেককে নিয়ে যায় নিজের শৈশব-কৈশোরে। এই বই লিখে আবিদ আজাদ দৃঢ় করলেন তাঁর নিজস্ব কবিতার ভিত্তি। কোন্ অপরূপ জাদুমন্ত্রবলে এই মায়াবী প্রাসাদ তৈরি হয়ে উঠলো, তাতে বিস্মিত না হয়ে উপায় থাকে না। কিন্তু ভাষায় রচিত বলেই এই প্রাসাদের রং চটবে না কখনো, ফাটল ধরবে না, শ্যাওলা জমবে না। ভাষার নির্মোকে এ এক প্রভাস্বর বই।