বহু বছরের মেধা ও শ্রমে এক ক্যালিগ্রাফার সুন্দর একটি কোরআন শরিফ তৈরি করেন। কিন্তু তিনি ভারতে এমন কোনো মুসলিম শাসককে পেলেন না, যিনি তার পরিশ্রমের উপযুক্ত মূল্য দিয়ে সুদৃশ্য কোরআন শরিফটি কিনবেন। এক পর্যায়ে তিনি লাহোরে এলেন পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রী ফকির আজিজউদ্দিনের কাছে কোরআনটি বিক্রয়ের চেষ্টা করতে। তিনি ক্যালিগ্রাফারের কাজের প্রশংসা করলেও এর কাঙ্ক্ষিত মূল্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করলেন। তাদের দর কষাকষির বিষয়টি মহারাজা রণজিৎ সিংয়ের কানে এলে তিনি ক্যালিগ্রাফারকে তলব করেন। মহারাজা শ্রদ্ধার সঙ্গে কোরআন শরিফটি নিয়ে তার কপালে স্পর্শ করেন এবং তার এক চোখ দিয়ে লেখাগুলো পরখ করলেন। ক্যালিগ্রাফির চমৎকারিত্ব তাকে মুগ্ধ করল। তিনি তার ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাখার জন্য কোরআনটি ক্রয় করলেন। কিছুক্ষণ পর ফকির আজিজউদ্দিন তার কাছে জানতে চাইলেন, একজন শিখ হয়েও তিনি এত উচ্চমূল্যে এমন একটি গ্রন্থ কেন কিনলেন, যা তার কোনো কাজেই লাগবে না। রণজিৎ সিং উত্তর দিলেন, 'ঈশ্বর চেয়েছেন আমি যাতে আমার এক চোখ দিয়ে সকল ধর্মকে সমানভাবে দেখি। সেজন্য তিনি আমার আরেক চোখের আলো নিয়ে গেছেন।'
এ কাহিনি প্রামাণ্য নয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত পাঞ্জাবিদের মধ্যে কাহিনিটি প্রচলিত আছে। কারণ, মহারাজা রণজিৎ সিংয়ের পক্ষেই পাঞ্জাবি মুসলমান,
হিন্দু ও শিখদের ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব হয়েছিল এবং একমাত্র তিনিই পাঞ্জাবকে স্বাধীন রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মহারাজা রণজিৎ সিংয়ের ব্যক্তিগত জীবন তার রাজনৈতিক জীবনের মতোই বর্ণাঢ্য ছিল। তিনি ছিলেন সাহসী, অমিতবিক্রমের অধিকারী। বহু যুদ্ধে তিনি স্বয়ং সৈন্যবাহিনী পরিচালনা করেছেন, চালিয়েছেন তরবারি। পাঞ্জাবি জাতীয়তাবাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন সাম্রাজ্যের অধিবাসীকে, যা রণজিৎ সিংকে ক্ষমতার শীর্ষে উন্নীত করেছিল। কিন্তু তার মৃত্যুর পর তার সাম্রাজ্যের অবক্ষয় শুরু হয়।