ব্রিটিশরা সাগর পাড়ি দিয়ে সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ভারতের দক্ষিণ অংশে পৌঁছায় এবং মোগল সম্রাট ও শাহজাদাদের কাছে ধরনা দেয় বাণিজ্যসুবিধা লাভের আশায়। ভারতবর্ষে বিরাজমান তখনকার নৈরাজ্যময় পরিস্থিতি ইংরেজদের উদ্দেশ্য সাধনের অনুকূলে ছিল। বণিক থেকে ক্রমান্বয়ে ভারতের শাসক হিসেবে তাদের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটায় মোগল সম্রাটের প্রতি ব্রিটিশের দৃষ্টিভঙ্গিও পালটে গিয়েছিল। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের পর ভারতবর্ষে মোগল শাসনের শেষ নিশানাটুকুও বিলীন হয়ে যায়।
ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ বিদ্রোহের পর বাহাদুর শাহকে অকৃতজ্ঞ বিদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করে। কিন্তু বাস্তবে এই বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশের বিরুদ্ধে উপমহাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ এবং বাহাদুর শাহ ছিলেন জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রতীক।
ইংরেজ ও তাদের এদেশীয় সহচররা দিল্লি নগরীতে এবং দিল্লি থেকে পলায়নপর লোকদের ওপর চড়াও হয়ে মোগল রাজপরিবারের প্রত্যক্ষ ও দূরতম সদস্যদের অনুসন্ধান করতে থাকে প্রতিশোধস্পৃহায়। মোগল রাজপরিবারের অনেক সদস্য ইংরেজদের নিগ্রহ এড়াতে পরিচয় লুকিয়ে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। মোগল পরিবারের সাথে সংশ্লিষ্ট মহিলাদের অবস্থা হয়েছিল সবচেয়ে করুণ। সিপাহি বিদ্রোহের কয়েক দশক পর দিল্লিবাসী খাজা হাসান নিজামী তাদের অনেকের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন। সিপাহি বিদ্রোহের সময় এবং পরবর্তী সময়ে তাঁরা যে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছেন, সে সম্পর্কে তিনি জানার চেষ্টা করেন। তার এই শ্রমসাধ্য প্রচেষ্টার
ফলেই প্রকাশিত হয়েছিল উর্দু ভাষায় একটি পুস্তক, 'বেগমাত কি আঁসু' বা 'মোগল শাহজাদিদের কান্না'। মোগল বংশের অধস্তন সদস্য, বিশেষ করে লালকিল্লা থেকে ছিটকে পড়া শাহজাদিদের করুণ কাহিনিই বিধৃত হয়েছে এই বইতে।