রুমির বয়স যখন ছত্রিশ, তখন তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত পÊিত ও ধর্মীয় নেতা হিসেবে সকলের সম্মানের পাত্র। ঠিক ওই সময়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে ষাটোর্ধ্ব শামস তাবরিজীর সঙ্গে, যিনি রুমির জীবনের ভিত্তিকে প্রকম্পিত, এক অর্থে বলা যায়, রুমির জীবনকে উলট-পালট করে ফেলেন।
রুমি শামসকে মহান এক শিক্ষক হিসেবে স্বীকৃতি দান করেন এবং তাদের প্রথম সাক্ষাৎ থেকে তাঁর প্রতি নিবেদিত হয়ে যান। এই দুই ব্যক্তির সাক্ষাৎ ছিল দুটি প্রমত্তা নদীর মিলিত হওয়ার মতো। শামস জীবনভর এমন একজনের সন্ধান করছিলেন, যিনি সত্যিকার অর্থেই তাঁকে বুঝবেন এবং তাঁর জ্ঞান গ্রহণ করবেন। অবশেষে তিনি রুমির মাঝে তাঁর কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে পেয়ে যান। এরপর রুমি মহান এক সুফি কবিতে পরিণত হন।
গ্রন্থটি দুই বন্ধুর মধ্যে আনন্দময় সাক্ষাতের ফলশ্রুতি। যখন হীরক খÊ কেটে সুনির্দিষ্ট আকার দেওয়া হয় তখন হীরকের ঔজ্জ্বল্যের বিভিন্ন মাত্রা ও গভীরতার মতো রুমির কবিতা প্রতিবার পাঠের সময় এর রঙের আরো স্তর, কোণ এবং মর্মার্থ উপলব্ধি করা যাবে।
জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি (৩০ সেপ্টেম্বর ১২০৭ – ১৭ ডিসেম্বর ১২৭৩), যিনি জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ বালখী, মাওলানা রুমি, মৌলভি রুমি নামে তবে শুধু মাত্র রুমি নামেও পরিচিত, ১৩শ শতাব্দীর একজন ফার্সি সুন্নিমুসলিম কবি, আইনজ্ঞ, ইসলামি ব্যক্তিত্ব, ধর্মতাত্ত্বিক, অতীন্দ্রিয়বাদী এবং সুফী ছিলেন। রুমির প্রভাব দেশের সীমানা এবং জাতিগত পরিমণ্ডল ছাড়িয়ে বিশ্বদরবারে ছড়িয়ে পড়েছে; ফার্সি, তাজাকিস্তানি, তুর্কি, গ্রিক, পশতুন, মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানরা বিগত সাত শতক ধরে বেশ ভালভাবেই তার আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারকে যথাযথভাবে সমাদৃত করে আসছে। তার কবিতা সারাবিশ্বে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং বিভিন্ন ধারায় রূপান্তরিত করা হয়েছে। রুমিকে যুক্তরাষ্ট্রের “সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি” এবং “সর্বাধিক বিক্রীত কবি” হিসেবে উল্লেখ করা হয়। রুমির সাহিত্যকর্ম বেশিরভাগই ফার্সি ভাষায় রচিত হলেও তিনি অনেক স্তবক তুর্কি, আরবি এবং গ্রিক ভাষায়ও রচনা করেছেন। তার লেখা মসনবী-কে ফার্সি ভাষায় লেখা সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ হিসেবে গণ্য করা হয়।